• 0
    your cart is empty !
Image

বাবা বিভ্রাট

যার বায়োলোজিক্যাল অনুতে আমাদের জন্ম হয় তিনিই আমাদের বাবা। খোলা চোখে দেখলে বাবা আসলে মানুষের একজনই । কিন্তু সমাজ সংস্কৃতির কারনে আমাদের নানা ধরণের বাবা জন্ম হয় ।জ্বী ,ঠিকই বলছি এই বাবাদের জন্ম আমাদের জন্মের পরেই হয় । এরা কখনো হয় পরম আত্নীয় শ্বশুর আব্বা আবার কখনো হয় সামাজিক রীতিনীতির উকিল বাপ । ক্ষমতার বাপও আছে অনেক প্রকার ,বলিউডে আছে সংস্কৃতিক গড ফাদার । ক্ষমতার কারনে কয়েকবছর আগে এমনো বলতে শুনা গেছে”আপনি আমার বাবা লাগেন ভাই” । যিনি বলেছেন সেই ব্যক্তি ভেবেছেন বাপ একটি আবেগী শব্দ , এই শব্দের ক্ষমতাবলে হয়তো তার সাত খুনও মাফ হয়ে যেতে পারে। তবে এতসব আলোচনার থেকে আশ্চার্য বাবা বিভ্রাট ঘটে আমার বন্ধু অনিকর জীবনে। এই জীবনের অত্যাধিক বাবা থাকায় মোটামুটি আমার বন্ধু সর্বদা বাবা বিভ্রাটে পড়ে। অত্যাধিক বলতে আবার বায়োলজিক্যাল পিতার সংখ্যা নয় , সমাজ সংস্কৃতিক ভাবে বহু বাবার ছায়ায় থাকে আমার বন্ধু অনিক ।
অনিকর নিজের বাবা, শ্বশুর বাবা , উকিল বাবা , বন্ধু বাবা এবং রুম্মেট বাবা থাকার চমৎকার অভিজ্ঞতা রয়েছে । এতোসব বাবার মধ্যে মাঝে মাঝে অনিক নিজের বাবার বিভ্রাটে পড়ে । বহু বছর আগে বিদেশ থেকে অনিকর বাবা বেশ কিছু জিনিষ অনিকর এক আংকেলের কাছে পাঠান । যথারীতি আমরা সেই আংকেলের সাথে দেখা করতে যাই। লোকটিকে দূর থেকে দেখে অনিক তার কাছে গিয়ে নিজের এবং তার বায়োলজিক্যাল পিতার পরিচয় দিয়েছে “আমি বাবুল আংকেলের ছেলে “। এই স্ববিরোধী কথা শুনে আমরা এক মুহুর্তে নিজেরাই হকচকিয়ে যাই । অনিক যে বাবুল আংকেলের ছেলে এটা আমাদের হজম করতে যথেষ্ট সময় লাগলো । কৌতূহ্ ল না দমাতে পেরে লোকটি চলে যাওয়ার পর আবার জিজ্ঞাসা করলাম , অনিক তুই কি পরিচয় দিলি ?অনিক কোন সঙ্কোচ না রেখেই বলে দিলো , “আমি বাবুল আংকেলের ছেলে “। আমরা যেনো অনিকর কথা শুনে শূণ্যে উঠে গেছি , আংকেলের ছেলে ! অ্যাঁয় । ধরনী দ্বিধা হও , আমরা গমন করিবর মতো অবস্থা । পরে বুঝা গেলো এটি অনিকর এটির বাক্য গঠনের স্থুলতার ফলাফল , বেচারা সঠিক বাক্যের প্রয়োগের ভুলে মোটামুটি বাবা বিভ্রাটের সর্দারে রূপান্তর হয়েছে ।
এর পর শ্বশুরকে দূর-আলাপনে ভাই বলেও একবার আড্ডায় হাস্যরসাত্নকের সৃষ্টি করেছে । তবে ইউরোপে আসার পর ইউরোপের হাওয়াতে অনিকর বাবা বিভ্রাট ইউরোপীয় ভাবধারায় হয়েছে । আমরা ইউরোপের বাংলাদেশের কাছে অপরিচিত ছোট দেশ ফিনল্যান্ডের একটি এলাকা রালসিন্তাই ১৬/আ এর একটি ফ্ল্যাটে থাকতেছি । আশ্চার্য রকম গল্পের জন্ম হচ্ছে এই বাসায় ,আমরা যেনো চার দেওয়ালের বাসায় মুক্ত বিহঙ্গ । অদ্ভত সব গল্পের এই বাসায় যে অনিকর বাবা বিভ্রাট হবে না , সেটা কিভাবে হয়। একদিন দুপুরে অনিকদের রুমে আমি বসে গল্প করছিলাম , আমরা প্রায় বিভ্রাটে অনিকর আগ্রহী অংশগ্রহণ দেখি । প্রায় আমরা হাস্য রসের জন্য অনিককের অনিকইইইইইইইই , ওওওওও অনিকইইইইইই বলে ডাকি । বিরক্ত হলেও বিভ্রাট অনিক অন্তত হ্যাঁ বলতেই হয় । তো শাকিল বলা নাই কওয়া নাই , হটাৎ বলে কবিতার মতো অনিক অনিক [জনি জনি বাদ দিয়ে] । ব্যাস বিভ্রাট ,অনিক আনমনেই বলে ফেললো “ ইয়েস পাপ্পা “ হাসির রোল পড়ে গেলো আবারো , আমার বন্ধু এভাবেই চরম বিভ্রান্তির মধ্যে রুম্মেটকে বাপ বানিয়ে ফেললো । বেচারা এবারো এমন বিভ্রাটে রইলো যে কি বিভ্রাটে পড়েছে , আমরাও বা কেনো হাসছি সেটা বুঝতেই তার জীবনে থেকে চলে গেলো ১২৫ টি সেকেন্ড ।
তবে বন্ধুটি বাবা বিভ্রাটের মধ্যেও নিজে বাবা হয়ে গেছে। এই বাবা সন্তান থেকে ছয় হাজার তিনশ আটষট্টি কিলোমিটার দূরে । এই বিভ্রান্ত থাকা ছেলেটি প্রতি মূহুর্তে নিজের বাবাব হওয়ার অনুভবে থাকে । সকাল শুরু হয় নিজের বিভ্রান্ত জীবনে ভালোবাসার আবেগী শব্দ বাবা অনুভবে। বাবা , আব্বা , পিতা , আব্বু কতোভাবেই না আমরা অনুভব করি । কতো আবেগেই কেউ বাবা ডাকে , কতো আবেগেই কেউ বাবা ডাক শুনে। কতো সন্তান আক্ষেপ করে ফোনেই অপর প্রান্তে বাবাকে না পেয়ে , বাবার জন্য এক জোড়া জুতা না কিনতে পারার আক্ষেপ কি নিজের জন্য শত জোড়া জুতা কিনলে পোষাবে? এইযে বাবাকে পাওয়া আর বাবার নিজেকে পাওয়ার যেই তৃষ্ণা তা কোন নদীর পানিতে মিটে । বাবার পাঞ্জাবীর ঘ্রাণ কি শতশতাব্দী বয়ে বেড়ানো যায়! কতো শত সন্তান অপেক্ষার প্রহর গুনছে সামনের ঈদে বাবাকে জড়িয়ে ধরবে , সেই জড়িয়ে ধরার সুযোগ সকল সন্তান পাক । সকল বিভ্রাটের কাছে হার মানুক বাবাদের ভালোবাসা ।সম্পর্কের দূত্যিই ছড়াক অন্তিম পথে ছুঁটে চলার আগ পর্যন্ত । জুতা জোড়া বাবাকে দেওয়ার সুযোগ হোক সব বাবার , সন্তানরা করতে পারুক অনন্তকাল বাবার কাছে আবদার ।
হেলসিংকি
০৮/০৪/২০২৩
Loader GIF